Sunday, December 16, 2018

কবিতা- সুমন মল্লিক




শরীয়তপুর / ১

মিঠে রোদ আর মিঠে বাতাসে হেঁটে চলেছি
আকাবাঁকা মেঠো পথে ৷ দু’পাশে পুকুর আর
বিল ৷ পুকুরে কচুরীপানা আর হাঁসের সাঁতার ৷
এখানে জীবন বড়ই সহজ ও সুন্দর ৷
মানুষের মুখে অনাবিল হাসি , ভাষায় মিষ্টতা ,
হৃদয়ে আপন করে নেবার সহজাত অভ্যাস ৷
টোটোর দুলুনি , দুপুরের ঘুম , সন্ধ্যার আড্ডা
সবেতেই প্রাণ ফিরে আসছে বুকে ৷ তবে
চারপাশের এতো স্নিগ্ধ সবুজেই আমার
মনোযোগ বেশি ৷ এখানে মোরগের ডাকে
ঘুম ভাঙে , ঘুম আসে নরম জোছনায় ভেজা
হেমন্ত-কুয়াশায় ৷ আমি শৈলশহর থেকে
বহুদূর সোনার এই বাংলায় প্রতিদিন হয়ে উঠছি
মাটির মানুষ ৷


শরীয়তপুর / ২

সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে অনেকটা ৷ এসময়
নৌকাবিহার  পাল তুলে দিচ্ছে বুকে ৷ ঐ যে
বাঁশের ডগায় বসে আছে মাছরাঙা –
শেষবেলার হেমন্তসূর্যে ও যেন ঈশ্বরের দূত ৷
মাঝি জাল ফেলছে জলে , তার গলার সুর
আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাদুদিগন্তে ৷
আমি ভুলে গেছি শহুরে কোলাহল , আমি
ভুলে গেছি কংক্রিটের জঙ্গলে কতটা
দমবন্ধ হয়ে উঠেছিল আমার ৷ সব ভুলে
আমি ডুবে রয়েছি সোনালি এই জল-বায়ুতে ৷
আমি ফিরতে চাই না , আমি এভাবেই
নৌকায় শুয়ে-বসে থেকে যেতে চাই প্রাণপ্রিয়
এই গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে ৷

শরীয়তপুর / ৪

কলাগাছ কেটে অপূর্ব কলাবউ বানানো হলো,
শাড়ি পরানো হলো, কি সুন্দর সুন্দর নৌকো !
বাড়ির মহিলারা খুব ব্যস্ত  আজ লক্ষ্মীপুজো । 
দুপুর-ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে বেরোলাম...
এখানে বিকেল সূর্যের আবির মেখে রাঙিয়ে দেয়
সবকিছু । আমি তালগাছে হেলান দিয়ে 
দেখি বকের মাছ-শিকার । আস্তে আস্তে
সন্ধ্যা নামে আর হাঁসেরা সাঁতার কেটে ফেরে । 
শঙ্খের শব্দ শুনে ঘরে ফিরলাম । পুজো প্রায়
শেষ । শুরু হলো কীর্তন । আর ঠিক তখনই
কানে ভেসে এলো আজানের সুর । কীর্তন আর
আজানের সুরমন্থন আমার রুহ্কে পবিত্র
করে তুললো । পবিত্র হয়ে উঠলো 
পূর্ণিমা চাঁদে ভেজা এই পল্লী জনপদ।

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে