Monday, December 17, 2018

পূর্বা মুখোপাধ্যায়- রূপালি নীরব



এইমাত্র যে-মেয়েটা পাঁচিল টপকে রেড়ির জংলা পেরিয়ে ঝিলপাড়ে গিয়ে বসলো তার কাছেপিঠে কেউ নেই একটা বেজি ছাড়া। বিকেল পড়ে আসছে। বেজি যেখানে থাকে সেখানে কি সাপ আসে? মেয়েটা ভাবল। ভাবতেই জলের ওপর খলবল করে উঠল একটা জলঢোড়া। নির্বিষ। নিরাপদ। নিশ্চিন্ত শোভায় মেয়েটা আনমনা হতে চাইল আর অজান্তে তার পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তন করে নিল একপাক।
চোখ বন্ধ করলে কোন দৃশ্য দেখতে পাও?
..."তোমার ছায়া"।
শূন্যে হাত বাড়ালে কোন স্পর্শ খুঁজে পাও?
..."তোমার আলো"।
বুক ভরে শ্বাস টানলে?
..."তোমার শরীর" বলে মেয়েটি পাশ ফেরে আর হাওয়ায় উড়ে যায়। তার পিঠে এখন পাখা হয়েছে। উড়ে কোথায় যায়?
ধরো একটা নীল দিগন্ত তোমাকে দেওয়া হল, যার ওপার তুমি কখনও জানবে না, শুধুমাত্র পাখার অধিকারে তুমি উড়ছ। দূরত্ব ক্রমশ বিস্তার পেতে পেতে গড়ে দিচ্ছে তোমার শূন্যের ধারণা। তুমি সেই শূন্য নিয়ে কী করবে?  "উদ্যান রচনা"। আর?  "বৃক্ষবয়ন"। আর? "কোটরে ডিম, ওম আর তীব্র মরিয়া শিষে তোমার শরীর ধুয়ে দেওয়া" - এই বলে সে পাশ ফিরল। তলিয়ে গেল নিচে।


"ঘুম এক স্নান আমি কী করে বোঝাবো কিন্তু স্নান"মেয়েটা বিড়বিড় করে আর তার সাঁতারহীন ভারী শরীর গিয়ে পঙ্কশয্যায় ঢলে যায়।লাল নীল রূপালি মাছেরা কৌতূহলী হয়ে কাছে আসে, ঠোকরায়। আদর করে। ক্ষত নিতে নিতে কিছুই অবশেষ থাকে না যখন ওর নাম মৃণালিনী হয়ে যায়। মাথায় পদ্মগন্ধ নিয়ে শরীরে পদ্মগোখরো পেঁচিয়ে ও জেগে ওঠে আবার। দ্যাখে অজান্তে ওর পৃথিবী আপন অক্ষে একপাক ঘুরে গেছে...

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে