Monday, December 17, 2018

পঙ্কজ চক্রবর্তী-র কবিতা




রাষ্ট্র -এক

একদিন তুমি বলে দিলে আমি নাকি নেই।বেশ তো আমি না হয় নাই রইলাম ।এই যে অলস রোদ্দুরে ডানা মেলে পাখির উড়ান-আমার দৃষ্টির সম্পদ নয় ।শিকড়ে শিকড়ে লেগে থাকা অভিকর্ষজ জল আমার বুকের টান নয়। যেন বা আমি এক পথভ্রষ্ট অতিথি।আমি অকারন মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়ি- তোমার নির্দেশ মেনে আমার স্বপ্নের রাত ব্যথাহীন ছোট হয়ে আসে।এখন কাঁটা বিছনো পথটাই একটা অবলম্বন- ফেরবার পথে তুমি কুড়ুল রেখেছ।অথচ একপ্রান্তে পড়ে থাকা সাধারণ মানুষের ঘোলাটে চোখে, একটুকরো মাচার ফসলে,ভাঙা সংসারের অন্ধকারে,গোপন চাবির সংকেতে কোথাও তোমাকে আমি খুঁজে পাচ্ছি না।তোমার নির্দেশ মেনে সীমানাহীন পথে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।সারাজীবন ধরে খুঁজে চলা একটা প্রশ্ন আর উত্তরের মাঝখানে তুমি উদ্দেশ্যপ্রবণ, সন্দেহবাতিক এক নির্বাক সম্ভবনামাত্র।

রাষ্ট্র -দুই

আমি তোমার গান গাই।রুক্ষ পথ আর পাথুরে জমির সমস্ত বাধা বিপত্তি সুরে সুরে সহজ করে নিই। উল্টোদিকের পথগুলি বন্ধ করে দিয়েছি অনেকদিন আগে।এখন আমি পড়ন্ত হলুদ পাতার মতো নৃত্যরত তোমার উঠোনে। আমার যা কিছু সংসারধর্ম তোমায় গোপন করার অভিলাষ।আমার বাঁশি কেঁদে ওঠে তোমার উন্মাদ হাওয়ায়নদীর পাশে পড়ন্ত ভাঙা সেতুর ব্যভিচার আমি দেখছি না।আমার চোখ তোমার অদৃশ্যর শুশ্রূষামাত্রআছে নিজস্ব এক  ঘুসঘুসে জ্বর।প্রতিকথায় গোপনে শুনতে পাই ফিসফিস আচ্ছন্ন মানুষ জেগে উঠবে কবে। নির্বাচিত হাওয়া, সমস্ত প্রলাপ ভাঙা ব্যধের পরিচর্যা তুলে রাখি অন্ধকার ঘরে ।



রাষ্ট্র -তিন

তুমি ঈশ্বরের ছলনায় আমাকে ঘিরে ফেলতে চাইছ ।অবিরত চক্রবূহ তোমারই রচনা ।আমি সমস্ত কথার বাইরে এক অর্বাচীন প্রলাপ ।তুমি সমুদ্রের পাশে মিষ্টি জলের খাঁড়ি ।যা কিছু দৈব উল্লাস তুমি তার চিরন্তন বাণী ।অক্ষরে অক্ষরে শাসনের গোপন বাসনা । আমি তোমার একদিনের ঢেউ, দুদিনের কথামালা আর তিনদিনের বিষাক্ত ছোবল। পুরনো জলের নীচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বর্ণমালা ।এরপর কথা বলব  তোমার অক্ষরে – নির্বাচিত অলীক ভাষায় ।আমরা একসুরে সমবেত প্রাণ ।এখনও বেঁচে আছি । একটু একটু করে পেরিয়ে যাচ্ছি তোমার ভাষার সীমানা ।

রাষ্ট্র -চার

একই প্রান্তের দুদিক ধরে টানছ তুমি, তোমার স্বভাব ।তোমার অহেতুক আত্মঘাতী বিলাপে আমি খুঁজে পেয়েছি একটি ভাঙাচোরা ঘর ।সব চোরাই রাস্তার পেছনে যেমন লোভ, সব লোভের সঙ্গোপনে যেমন প্রতারণা, এভাবেই তোমাকে চিনেছি আমি।  চাল আর কাঁকরের মাঝখানে তুমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্বেচ্ছাসেবী। দুহাতে বিলোচ্ছো সব দাণ খয়রাত আর অদৃশ্য হাসির পিছনে আমি দেখে ফেলেছি ছদ্মবেশী সোনার দাঁত।  তুমি আমার উঠোনে ধর্মসভা  করো । প্রতিবেশী আগুন লেলিয়ে দাও আমারই ধূসর আঙিনায় ।
আমি মেধাবী দূরত্ব যোজনা করি তোমার ছায়ায় বসে । হে রাষ্ট্র, হে উদাসীন তোমার পুরস্কার ফিরিয়ে নাও; আমার ব্যথার পাশে একা এসে বসো না কখনো ।





No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে