Sunday, December 16, 2018

গ্যাব্রিয়েল ওকারার কবিতা/ অনুবাদঃ সুমন জানা




কবি পরিচিতিঃ নাইজিরিয়ার কবি ও উপন্যাসিক, জন্ম – ২৪ এপ্রিল, ১৯২১। আফ্রিকার প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসনের দ্বন্দ্ব তাঁর রচনাকে বিশেষত্ব দিয়েছে। সর্বাধিক বিখ্যাত কবিতার বই- ‘দ্য ফিসারম্যানস্ ইনভোকেশন(১৯৭৮)

 
বাতাসের প্রাণ

ওই সারসেরা আসছে এখন,
সাদা বিন্দুরা নির্বাক নীলে।
তারা উত্তরে গিয়েছিল খুঁজে
বাসা বানাবার ভাল পরিবেশ
এখানে যখন ছিল বর্ষা।

তারা ফিরেছে আমার কাছে আজ
প্রাণ যেন তারা বাতাসের,
দেব-দেবীদের নাগাল ছাড়িয়ে
তারা উত্তর, পশ্চিম ও পুবে
যায় প্রেরণার দ্বারা পরিচালিত।

কিন্তু সে দেবতারই মর্জি,
আমি বসে আছি এই পাথরে
আর দেখছি তাদের আসা যাওয়া
সূর্য উদয় থেকে অস্ত,
নিয়ে প্রাণের উচ্ছলতা ভিতরে।

নড়ে উচ্ছল লাল জলাশয়,
তার প্রত্যেক তরঙ্গ যেন
প্রেরণার প্রাণদায়ী ডাক,
এক ইচ্ছা যা প্রতিটি কোষের
অভ্যন্তরে আছে বন্দি

হে দেবগণ ও আমার দেবতা,
দুপুরে মেরির স্তবে বাজা
ওই প্রার্থনা ঘণ্টার ডাকে
আমি কি হব না মনোযোগী,
যেহেতু আমার সারস বন্দি
আছে চিহ্নিত চুল কালো চামড়ায় ?

২. মূল কবিতাঃ


নববর্ষের  পূর্বরাত

ঘণ্টার ধ্বনি এখন ঘোষণা করে –
একটি বছর মৃত।
ধীর স্পন্দনে হৃদয় আমার
এক বছরের আকুল আকাঙ্ক্ষার
সব আশা আর অপূর্ণ সব চাহিদাগুলিকে বলে-
‘এখন তোমরা খারিজ’,
আর অতীতেরা ইতিউতি ঘোরে
স্বপ্ন ছাড়িয়ে স্বপ্নে।

স্বপ্ন ছাড়িয়ে স্বপ্নে
মৃত্যুতে গলে মিশে যায়
ক্রমে ক্ষীণতর ঘণ্টা,
যেভাবে বৃষ্টিবিন্দু
নদীর প্রবাহে মিলে যায়।

আবার এখন একতানে বাজে ঘণ্টা-
একটি বছর জন্মায়।
এবং আমার হৃদয়-ঘণ্টা বাজে
প্রথম প্রভাত বেলায়।
কিন্তু দেখি যে লুকোনো ইচ্ছাগুলি তার
হৃদয়-চাঁদোয়া ঢাকা পথ দিয়ে
নিষ্প্রভ ভাবে ডিঙিয়ে যাচ্ছে
একটি নদীর পাড়ে।



৩. মূল কবিতাঃ


ভিক্টোরিয়া সৈকতে এক রাত

সাগরের বুক থেকে তীব্র বেগে ধেয়ে আসে হাওয়া,
তরঙ্গ ঝাঁপিয়ে পড়ে, বালির উপরে যেন মাম্বার ছোবল,
আর পুনরায় রাগে হিস্ হিস্ শব্দে তার ফণা পাক খায়।
বালির উপরে খুব জোরে ঘষে ঘষে আর কড়া চোখে চেয়ে
আলাদুরা খ্রিস্টানদের পা সেইসব তরঙ্গ ধোয়ায়
আলাদুরাদের ঢঙে তারাও প্রার্থনা করে জোরে জোরে, তার কাছে,
কেবল অন্তর দিয়ে যাকে দেখা যায়;
পিছনের কুঁড়েগুলি থেকে এসে তারা বাধ্য করে
উচ্চতর জীবনের মানুষগুলিও জোরে কান দিক, আর
গাড়ির যুগল আলো চমকে উঠে হাতে হাত রেখে
দর কষা-কষি করা ক্রেতা ও বিক্রেতার মতো
প্রক্ষালনকারী সব কথাগুলি পার হয়ে যাক –

তবুও প্রার্থনা করে তারা, আলাদুরাদের ঢঙে
হৃদয়ে হাতের চাপ দিয়ে
আর বাতাসের চাপ পরনের সাদা আঙরাখাটিকে    
তাদের গায়ের সঙ্গে সেঁটে রাখে, আর
সৈকতের পানশালাটিতে বসে তাল-তাড়ি এবং বিয়ার পান করা
মানুষেরা অতিশয় বারফট্টাই মেরে চলে।
তবুও প্রার্থনা করে তারা, আলাদুরাদের ঢঙে, তার কাছে,
কেবল অন্তর দিয়ে যাকে দেখা যায়;
তখন জেলেরা, যারা দীর্ঘদিন আগে থেকে মৃত,
যাদের গড়িয়ে যাওয়া হাড় খুঁটে সাফ করে ফেলেছে মাছেরা,
তারকার মতো দীপ্ত চারখানা মৃত কড়ির পিছনে
গভীর সমুদ্রে নামে, যেখানে মাছেরা বসে বিচারসভায়, আর
জীবিত জেলেরা বসে অন্ধকার তাদের কুটিরে মৃদু আলো ঘিরে,
বাবালাও পুরোহিত আগামীকে দেখার প্রয়াসে
বালির উপরে সেই চারটি কড়িতে তাদের আত্মাগুলিকে ছুঁড়ে মারে।

তবুও প্রার্থনা করে তারা, আলাদুরাদের ঢঙে, তার কাছে,
কেবল অন্তর দিয়ে যাকে দেখা যায়, পাক খাওয়া ঢেউয়ের পিছনে,
সমুদ্র ও তারার পিছনে, আকাশের পরাভূত ঐকমত্যের পিছনে
এবং বালির নীচে জেলেদের সাদা সাদা হাড়ের পিছনে –

আর মৃত বালির উপরে আমি নিষ্প্রাণ দাঁড়িয়ে
বুঝি যে আমার হাঁটু ছুঁয়ে আছে জীবন্ত বালিকে –
কিন্তু ধাবমান হাওয়া ব্যর্থ করে দেয় সব স্ফুটনোন্মুখ কথাগুলি।

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে