Sunday, December 16, 2018

কবিতা রিমি মুৎসুদ্দি





উড়োজাহাজের ভাবনারা

উড়োজাহাজের ডানার তলায় ভেসে থাকা
উথালপাতাল ঢেউ, চাপচাপ কুয়াশা
মেঘের ভিতর দিয়ে পুরোটাই তো গোপন কথামালা,
হয়ত বা আলোআঁধারি গলিঘুঁজি
যেখানে কফি আর চুমুর সাথে ছোটো ছোটো রক্তের বুদবুদ

কড়া কফির গন্ধে সম্বিৎ ফিরে পাই
এয়ারহোস্টেসের সার্ভ করা প্রাতরাশ
তখনও কি একটা দীর্ঘকবিতাই মনে পড়েছিল?
অথচ অক্ষরগুলোর গায়ে পুরু ধুলোর আস্তরণ
যাকে পরিণতি ভাবা ভুল ছিল।

আসলে আমার মাথায় তখন শুধুই খিদে।
খিদের ভাবনায় গতরাতের কথা মনে পড়,
গতরাতে প্রথম একপেগ হোয়াইট হোয়াইন খেয়েছি।
বিগত বহুদিনের খিদে তেষ্টা
একপেগ হোয়াইন দিয়ে ঢেকে ফেলেছি?

ঘুমের ভেতর ভেসে আসা স্পষ্ট
অথচ ধোঁয়াশা ভরা ভয়েসওভার দ্যা আদার সাইড
যাকে খোসা ছাড়িয়ে কামড়ে, চুষে খেয়ে ফেললেও
পুরনো খিদেরা সব সার দিয়ে দাঁড়িয়ে
যেন দুর্ভিক্ষে পাওয়া অপর্যাপ্ত ভাতের ফেন
আর অভুক্ত শিশুর মৃতদেহ। 

মদ বিষয়ক ধারণা আমার সীমিত।
হয় আশ্চর্য সব কবিতা না হয় ভুলে থাকা
যেমন মেঘ দেখলেই ধানের শরীর জেগে ওঠে,
গোলাপের সুগন্ধও হয়ত ভুলে যায় শুধু মাংসের ঘ্রাণ নয়
যেকোনো স্বাদু খাবারের গন্ধের কাছেই সে অসহায়!   
পুরনো সব ঋণগুলোও জানে
জ্যোৎস্নার নিজস্ব কোনও আলো নেই
তবুও চাঁদ দেখেই সুখ, আনন্দ আর অজস্র কবিতা।

আকাশ সমুদ্রের দুধশাদা ফেনার ভার্জিন শূন্যতা,
যেখানে অস্ফুট কোনও কথা নেই, নেই কোনও অক্ষর
শুধুই আটপৌরে ব্যথার বিস্তার।



একটা সাপ ও আমি

একটা সাপের সাথে সেদিন হঠাৎ দেখা
আমাকে জড়িয়ে পেঁচিয়ে একটু একটু করে
উপর থেকে নীচে নামল সে।
তার উদ্ধত ফণা টের পেলাম না।
কারণ, সমস্ত চেতনা ততক্ষণে অবশ
ক্রমশ জ্ঞান বিলুপ্তির পথে,
তবুও কষ্ট পাচ্ছি না। ভয় না কষ্ট?
সরীসৃপ মানেই শীতভাব
অথচ আগুনের গনগণে আঁচ
যেন একটু একটু করে গিলে নেবে
আর আমি সেই অনুভূতিতে সেঁধিয়ে যাব!

আবারও নির্ভার হতে থাকি
ক্রমে আমাকে ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে।
তার হাঁমুখে আমি নেই, আমি মুক্ত।
যতটা আনন্দ পাওয়ার কথা
ততটা আনন্দ এই মুক্তি আমাকে দিল না
আমি সাপটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি
বিষণ্ণতায় ভর করে এইবার তার ফণা দেখতে পেলাম।
একটু একটু করে অন্য শিকারের দিকে ক্রমশ এগিয়ে
অথচ সেই কবেকার বিষদাঁত হারিয়ে


গিলে নেওয়ার অক্ষমতায় উদ্ধত প্রয়াস।  

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে