Sunday, December 16, 2018

একগুচ্ছ কবিতায় দিশারী মুখোপাধ্যায়




একা এবং নিঃস্ব মানুষ  ১- ১০

১)

একটা বিশেষ জায়গায় 
স্বপ্ন গিয়ে দানা বাঁধতে চাইল 
আমি ভাবলাম ইস্পাত 
ভাবলাম জলের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেও 
আগুনকে জেনে বুঝে নেওয়া যাবে 

ভাবনা প্রায়শই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে 
গিঁটপাকিয়ে যাওয়া রাস্তা গুলো 
কোনো বন্ধু পায়না   আর 
রেনকোজির ছাই থেকে কোহিনূর পর্যন্ত 
সব কিছুই আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি হওয়ায় 
স্বপ্নরা ছানা কেটে যায় বারবার 

২)

কীভাবে যে শুরু হবে 
ভাবতে ভাবতে শেষ হয়ে গেল আলাপ 

মেঘমল্লারে গিয়ে পৌঁছাতে চাই 
একে তাকে জিজ্ঞাসা করি পথের ঠিকানা 
পথিক মাত্রেই দেখি উদভ্রান্ত এবং নির্বাক 

কীভাবে যে পেড়ে বসব ছুটির প্রস্তাব 
ভাবতে ভাবতে জড়িয়ে পড়ি লতায় পাতায় 


৩)

যতিচিহ্নগুলো আমি ঠিকঠাক ব্যবহার করতে শিখিনি 

টেলিস্কোপের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যেই 
চিরস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয় 
যখন টেকে না তখন টেথিস্কোপের শরণাপন্ন হই 

একটা হাইফেন বাড়তে বাড়তে এত বড় হয়ে যায় 
অথবা কয়েকটা অর্বাচীন ডট 
তারা মানতেই চায় না 
ডুবসাঁতার বলে একটা প্রথা এখনো চালু রেখেছে 
গভীর জলের মাছেরা 

৪)

রাত্রি একদিন রাত্রির খোঁজে বার হয় 
মধ্যরাতে একা একা 

শহরের রাস্তাগুলো 
এক একটা দীর্ঘশ্বাস 
রাত্রি তাদের স্পর্শ করে 
রাধাবিনোদ করে তুলতে চায় 

জঙ্গলের পাশে 
ওতপেতে বসে ছিল আলো 
শিকার এখনো নিষিদ্ধ নয় তার জন্য 


৫)

আর ঠিক কতটা সময় পড়ে আছে ঘড়িতে 
অনুমিত নয় 
মাঝেমাঝে শুধু মনে হয় 
এই বুঝি শেষ হুইশেল বাজিয়ে দেবে 
মাঠের রেফারি 

দিনান্তের কাকের দল 
ফিরে আসছে ঠিকানার দিকে 
অথচ কবির লেখা 
অনেকটাই বাকি রয়ে গেছে 


৬)

একজন কবি তার হৃদপিন্ডের প্রদর্শণ করেন 
প্রতিটি ভাঁজ খুলে খুলে দেখান 
রক্তে ভেসে যায় যাদুঘর 
তিনি নেমে যাবার সাথেসাথেই 
ডাক পড়ে পরবর্তী কবির 

সেরা হৃদপিন্ডটি নির্বাচিত হলে 
করতালির কনসার্ট চলে কিছুক্ষণ 

যারা বিচারক আর করবাদক থাকেন 
তাদের হৃদপিন্ডগুলি 
সিলমোহরে সুরক্ষিত থাকে 


৭)

ফেবিকলের থেকেও ঘন আর ন্যাওটা 
অন্য লোকেরা যতটা প্রেমিক ভাবে 
আদতে আরও বেশি 
যখন জড়িয়ে ধরে কাউকে 
অ্যানাকনডাও আর এগোয়না সেদিকে 

গ্রাস সম্পূর্ণ শেষ হলে 
ভুক্তাবশিষ্ট পড়ে থাকে সবটাই   কারণ 
চোর সম্পূর্ণ বৈধ 
সাধনা করে ডেকে আনতে হয় তাকে 


৮)

হারিয়ে ফেলা তাকেই মানায় 
কুড়িয়ে রাখার লোক রয়েছে যার 
আর চাইনা ঢের হয়েছে সেই বলবে 
যার কাছে লোক নিঃস্ব হয়ে উজাড় 

উদাস লোকে রাস্তা হারায় 
ভক্তজনে ঠিকানা ঠিক রাখে 
একা এবং নিঃস্ব মানুষ পথ চলতে 
জড়িয়ে ধরবে তাকেই পাবে যাকে 


৯)

বুক চিরে দেখাতে চাইছে খাতা 
দুদিকেরই পাতাগুলো উড়ছে 
গতকাল এবং আগামীকাল দুজনেই 
হয়ে উঠতে চাইছে আজ 

খোলা জানালার সামনে 
চিন্তিত আকাশ 
সে জানেনা পঞ্জিকরণের উপায় 


১০)

সমস্তদিন খরচ হয়ে যাবার পর 
পড়ে থাকবে সময়ের শূন্য আধার 

যেসব সময় আমার নষ্ট হয়ে গেল 
গলে পচে শহরের নর্দমা দিয়ে বয়ে গেল 
তার জন্য তোমার কোনো দায় নেই  
তোমার ক্যালেন্ডার উৎসবের তিথি নক্ষত্রে ভরা 


যে দুএকটি দিন অবশিষ্ট আছে হাতে 
চারা গাছ রোপন করতে চাই আমার শ্মশানে 


শূন্যের মত পূর্ণচেতন প্রয়াসে 

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে