Monday, December 17, 2018

কবিতাগুচ্ছ নবনীতা চট্টোপাধ্যায়




সাফল্য

কত সহজে তুমি মুছে দাও ডানার জলপ্রহরের শব্দ
আর আমাদের একক আস্তাবলের সেই কৃষ্ণ অশ্ব
পা ঠুকে কেশর ফুলিয়ে যে পেশ করছে তার
ইচ্ছা পত্র_____এক লম্বা শূন্যতার ঘোড়দৌড়ের
তার মুখে তুমি বসাও পূর্নতার লাগাম
 
তুমি এলে___যেন তুমি নও,সহস্র পরিক্রমা শেষে
রথের থেকে নেমে আসছেন স্বয়ং রৌদ্রদেব
তার রৌদ্র_কৃপাণের স্বর্ণালি আভায় ঝলসে যাচ্ছে
মৃত পক্ষী....নিস্প্রত্র বৃক্ষ.....নির্জলা মুহূর্ত....
   
যাবতীয় হাহাকার সংগীত হয়ে ভেসে আসছে
লবনাক্ত স্বেদ ও অশ্রু নিয়ে নিভৃত সারস এক
হেঁটে যাচ্ছে ঘোর লাগা জোছনার দিকে....
   
পৃষ্ঠা অভিমানকাব্যের

শ্মশানে কোনো দাহ নেই___
অন্ধকার সাঁতরে আসা বৃক্ষ
সে জানে....ভালোই জানে
আনাচে কানাচে...পথের বাঁকে
লেলিহান শিখার দগ্ধ স্বরলিপি
কবরে কোনো মৃত্যু নেই___
কতবার উন্মত্ত সিংহের মত
ছিন্নভিন্ন করে গেছে মৃত্যু
তার যাবতিয় শ্যাওলা ও আঁশ...
মেঘ ও কুয়াশায় মাখামাখি
জলকণা ছুঁেয় ছুঁেয় ফেরা
নির্জন ঐ সাঁকোটি ধরে....
দৃশ্য নই....পৃষ্ঠা অভিমান কাব্যের...


বৃষ্টি নামার আগে

আমাদের ফেরার কথা ছিল....
রাস্তার মোড়ে....চৌমাথায়....
 
একটি নি:সঙ্গ ট্রাম...অলস দুপুরে
বিবর্ণ ল্যাম্পপোস্ট....বারোয়ারি বটে
যাবতীয় বেহিসেব নিস্পলক হেলানে...
আমাদের দুজনের সেই দরজাটা
(ধূলোপড়া.....খুলবে কী ?)
যদি খোলে হয়তো বা একরাশ
বন্দি জলচূর্ন মেঘ সেলাম জানাবে তোমায়
অথবা হয়তো এইসব কিছুই নয়
সেইসব মেঘেরা কবেই শুয়েছে
কবরে নিশ্চুপ,যদি ভাবো
সেইসব নক্ষত্ররা আজো জেগে আছে...
তবে জেনো আলো নেই তবু
আলো দেখা যায় ওরা
একঝাঁক সেই মৃত নক্ষত্র...
ধূলোর জালিকা সরিয়ে এসো খুঁজি
আমাদের জীবাশ্ম....মৃত চাঁদ....
এইবার আকাশ তোলপাড় করে
পরস্পর কথা বলতে বলতে
মাটিতে নেমে আসবে বৃষ্টিরা....

ছায়ামানুষ

এক কাপ  চায়ের চেয়েও
ঊষ্ণ ছিল তোমার ঊজ্জল উপস্থিতি....
ছড়ানো বই খাতা সিগারেটে....
বেসুরো হিন্দি গানের কলিতে....
হাঙ্গারে ঝোলানো বাসি পাঞ্জাবিতে
বেরিয়ে আসছ ঘামজলের তুমি...
উজ্জ্বল নাক্ষত্রিক দিনগুলি নিয়ে
পাহাড়ি চিতার মত ছুটছ
তুমি আমার কক্ষপথ জুড়ে...
একে কি বিরহ বলে
যদি আমিও এক জলমগ্নতায়....?
ছায়াটিকে ফেলে রেখে তুমি
চলে গেছ, নাছোড় সেই
ছায়া হেঁটে যায় অনিবার
আমার আনখশির জলতলের ঘরদুয়ার...


আলব্যাম
বাতাসে পাতা পড়ার শব্দ হলে....
দরজা জানালা খুলে যায়
আমাদের বাড়ির.....
দূর নাক্ষত্রিক জগত থেকে
বাড়ি ফিরে এসেছ তুমি
উঠানের জলের দাগ মুছে
নিচ্ছে আচমকা এক রোদ্দুর....
আমি যেন পাখি এক...
জলের নূপুর খুলে রেখে
উড়ে বেড়াই এঘর ওঘর....
কি দেব তোমার তাপহীনতায়
যাবতীয় ঊষ্ণতা করতলে এনে
অঞ্জলি দিই জীবনের তাপেকখন বৃষ্টি নামে ঝাঁপসিয়ে
ভিজে চুপচুপ জীর্ণপাতার রাশ
অবুঝ হাওয়া জলকণা নিয়ে
চোখের পাতায়...ফটোর ফ্রেমে...
দরজা জানালা বন্ধ করে
বাড়ীটি ও ভিজছে একা...বিষণ্ণ...
একফোঁটা জীবন....শুধু জীবন
হাক্লান্ত সায়ুধ বাহিনির মতো
আমাদের বাড়ী এক অলৌকিকের প্রত্যাশায়....

No comments:

Post a Comment

এক ঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে